আমদের সবার দেহে অসংখ্য রক্তনালী জালের মত ছড়িয়ে আছে । কিছু রক্তনালী সারাদেহের কোষ থেকে দূষিত রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে যায়, এদেরকে শিরা বা ভেইন বলে । আবার কিছু রক্তনালী হৃদপিণ্ড থেকে বিশুদ্ধ রক্ত সারা দেহে ছড়িয়ে দেয়, এদেরকে ধমনী বা আর্টারি বলে । রক্তনালীর মধ্যে দিয়ে রক্ত তীব্র গতিতে চলাচল করে । অনেকসময় এ রক্তনালী আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়, দেখা দেয় নানা সমস্যা । রক্তনালী ব্লক হয়েছে সেতা নিশ্চিতভাবে জানার উপায় কি? উত্তর একটাই, অ্যানজিওগ্রাম ।
অ্যানজিওগ্রাম কি?
অ্যানজিও মানে রক্তনালী আর গ্রাম মানে বার্তা । অর্থাৎ যে পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তনালী কেমন আছে তা জানা জায় তাই অ্যানজিওগ্রাম । বর্তমান সময়ে খুব পরিচিতি পাওয়া এ পরীক্ষাটি নিয়ে সবার আগ্রহ অনেক বেশি ।
অ্যানজিওগ্রাম কত ধরনের হয়?
অনেকে মনে করেন অ্যানজিওগ্রাম মানে শুধুমাত্র হার্টের রক্তনালীর পরীক্ষা । প্রকৃতপক্ষে, হার্ট ছাড়াও দেহের আরও কয়েকটি জায়গায় রক্তনালীর অবস্থা বুঝার জন্য অ্যানজিওগ্রাম করা হয় । যেমনঃ
·
হার্টের অ্যানজিওগ্রাম
·
পায়ের অ্যানজিওগ্রাম
·
হাতের অ্যানজিওগ্রাম
·
ব্রেইনের অ্যানজিওগ্রাম ইত্যাদি
অ্যানজিওগ্রাম কিভাবে করা হয়?
·
অ্যানজিওগ্রাম করার পূর্বে ইসিজি, রক্তের হিমোগ্লোবিন, ক্রিয়েটিনিন, এইচবিএসএজি(HBsAg), ব্লিডিং টাইম/ক্লটিং টাইম, রক্তের গ্রুপ ও ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করানো হয় ।
·
পরীক্ষার পূর্ব দিন (ক্ষেত্রে বিশেষে পরীক্ষার দিন)
রোগীকে ভর্তি করানো হয়।
·
পরীক্ষার পূর্বে রোগী হালকা খাবার খেতে পারেন ।
·
নির্দিষ্ট সময়ে রোগীকে ক্যাথলাব-এ নেওয়া হয় ।
·
অতপর কুচকির কাছে একটি সুঁই বা সিরিঞ্জ দিয়ে ছোট একটি ফুটা করা হয় (হাতের কব্জির রক্তনালীর মাধ্যমেও করা যেতে পারে) এতে সুবিধা হলো রোগী দ্রুত নড়াচড়া করতে পারে ও বাসায় যেতে পারে ।
·
তারপর উক্ত ফুটো দিয়ে নির্দিষ্ট অংশের রক্তনালীতে অ্যানজিওগ্রাম সহায়ক রঞ্জন তরল পদার্থ প্রবেশ করানো হয় ।
·
রক্তনালীর ভিতরে রঞ্জন পদার্থের চলাচল বাহির থেকে একটি মেশিনের সাহায্য দেখা হয় ও ছবি তুলে রাখা হয় ।
·
প্রয়োজনীয় অংশের ছবি তোলা শেষ হওয়ার পর রোগীকে নির্দিষ্ট রুমে ফেরত পাঠানো হয় ।
·
পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে ।
অ্যানজিওগ্রাম সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য
·
এজন্য রোগীকে অবশ্যই অন্ততঃ ১ দিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে ।
·
স্বল্প সময়ে শেষ হয় ।
·
রোগীকে পুরো অজ্ঞান না করে শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে অবশ করা হয় ।
·
প্রক্রিয়াটি প্রায় ব্যাথামুক্ত ।
·
প্রক্রিয়াটি সাধারনত ঝুকিমুক্ত ।
·
এটা কোন অপারেশন নয়,
রোগ নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি মাত্র । তবে অনেক সময় অ্যানজিওগ্রাম করার সময় রিং বা স্টেন্ট বসিয়ে দিয়ে বন্ধ রক্তনালী সচল করা হয় ।
·
একবার অ্যানজিওগ্রাম করার পর অপারেশন বা রিং বসানোর জন্য সর্বোচ্চ তিন মাস অপেক্ষা করা যায় । এর বেশি হলে পুনরায় অ্যানজিওগ্রাম করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় । তবে ঝুঁকি এড়াতে চাইলে যত দ্রুত সম্ভব সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেওয়া ভালো ।
অ্যানজিওগ্রাম তুলনা মূলক ব্যয়বহুল কেন ?
·
রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হয় ।
·
ব্যবহৃত মেশিনটি অনেক ব্যয়বহুল পরীক্ষা সম্পাদন করতে ডাক্তার, অ্যাসিস্টেন্ট, নার্স, টেকনিশিয়ান সবার উপস্থিতির প্রয়োজন পড়ে ।
·
পরীক্ষাটি সম্পাদনের জন্য যে রি-অ্যাজেন্ট ব্যবহার করা হয় তা বেশি দামি ।
অ্যানজিওগ্রাম করার কতক্ষন পর বাসায় যাওয়া যায় ?
ছয় ঘন্টার মধ্যে রোগী চাইলে বাসায় চলে যেতে পারেন । তবে সমস্যা না থাকলে ১দিন হাসপাতালে থাকা ভালো ।
অ্যানজিওগ্রামের আধুনিক পদ্ধতি গুলো কি কি ?
সিটি স্ক্যানারের সাহায্যে অ্যানজিওগ্রাম করা যায় ।এতে হাতে স্যলাইন দেয়ার মতো করে ইনজেকশন দেয়া হয় । এটি প্রায় ব্যথামুক্ত এবং পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাসায় চলে যেতে পারে । রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না । এছাড়া ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স অ্যানজিওগ্রাম বা এমআরএ নামক আর এক ধরনের অত্যাধুনিক অ্যানজিওগ্রাম করার পদ্ধতিও চালু আছে।
পেটের
বড় রক্তনালীর বড় রোগঃ এবডোমিনাল এওর্টিক এনিউরিজম
(Abdominal Aortic Aneurysm -AAA)